শিরোনাম | উৎস | তারিখ |
৭৭। একাত্তরের ডায়েরী | ১ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের ডায়েরী | ২৭ মে, ৭১ |
ট্রান্সলেটেড বাইঃ Razibul Bari Palash
<১১, ৭৭, ৫৪১- ৫৪৫>
মে ২৭, ৭১
সকালে অফিসে বসে পরিকল্পনা করলাম। ১৫ জন ট্রেনিং পপ্রাপ্ত ছেলেকে বাংলাদেশের ভিতরে গেরিলা অপারাশনে পাঠালাম। আর্মি অফিসারদের সাথে আলোচনা করলাম।
সন্ধ্যায় ২ জন ই এফ আর সৈনিক কে জিজ্ঞাসাবাদ করলাম। তারা স্বীকার করেছে যে তাদেরকে পাকিস্তান আর্মির মেজর সালমান পাঠায় মেজর জিয়াউর রহমান ও আমাকে হত্যা করার জন্য। সালমান ছিল আমার কোর্স মেট। কিন্ত আজ?
জনাব আমিরুল ইসলাম এর সাথে দেখা হল, একজন ব্যারিস্টার- যার সাথে আমি কুষ্টিয়া জে ৯৬৯ এ মিলিত হয়েছিলাম। কিছু ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনা হল।
৩১ মে ৭১
অস্ত্র / গোলাবারুদ সরবরাহের প্রক্রিয়া খুব ধীর। একই অবস্থা অন্যত্র। দুই মাসের বেশি হয় সৈন্যরা কোন কম্বল, জুতা বা গুরুত্বপূর্ণ পোশাক পেলনা।
মানুষের দুরবস্থা দেখা বেদনাদায়ক। কিন্তু এই পর্যায়ে আমরা অসহায়। যুদ্ধে দুই বছর সময় লাগতে পারে।
আজ C.O.S. রব ও ব্রিগেডিয়ার সাবেক সিং এসেছিলেন। কিছু আলোচনা ছিল।
আগস্ট ৩১, ৭১
চট্টগ্রামে নেভাল অপারেশন সম্পন্ন। হারানো ছেলেগুলো বহির্নোঙ্গরে ২ টি জাহাজ ডুবিয়ে ফিরে আসে। মিরসরাই পার হওয়ার এক ছেলে রাজাকারদের হাতে গ্রেফতার হয়। সম্ভবত আক্রমণাত্মক প্রকৃতির কিছু সেট করা লাগবে।
১ সেপ্টেম্বর, ৭১
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা অপারেশন এখনো তেমন গতি অর্জন করেনি। এখন পর্যন্ত একমাত্র সফল অপারেশন নেভাল কমান্ডোরা করেছে। সেখানে কোনো গুরুতর প্রকৃতির কোন কঠিন অপারেশন হয়নি। কারণ:
ক। অধিকৃত এলাকার নেতৃত্বের পরম শূন্যতা
খ। গেরিলা কার্যক্রম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি
গ। বাংলাদেশ বেতারে মানুষের কাছে নিয়মিত নির্দেশনা জারি করায় ব্যার্থতা
ঘ। তিনটি প্রতিবাদী বাহিনী জায়গা আয়ত্ত করার চেষ্টা করছে
১। আওয়ামী লীগ
২। ছাত্রদের গ্রুপ
৩। আর্মি
সেপ্টেম্বর ২, ৭১
১৮০০ টায় ৯২ বিএসএফ সদর দপ্তরে যাই। জেনারেল গাঞ্জালাভ & ব্রিগেডিয়ার আনন্দ সাম্প এর সাথে ছিলাম। চট্টগ্রাম এলাকা ও জ্বালানি কমপ্লেক্সে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ধ্বংস করার পরিকল্পনা করি। এই উদ্দেশ্যে দুইটি ৫৭ এমএম আরএল গ্রহণ করার সম্ভাবনা । ক্ষেপণাস্ত্র হলে ভাল হত। জেনারেল রাজি , কিন্তু সরকার এখনও এই নতুন অস্ত্র মুক্তিবাহিনী কে দিতে ইচ্ছুক নয়।
২৩ সেপ্টেম্বর, ৭১
০৩৩০ ঘণ্টা এ (এইচ-LTR) হামিদ একটি কয় দিয়ে বল্লভপুর এবং মাহফুজ একটি কয় দিয়ে চম্পকনগর আক্রমণ করেন। আর্টিলারি ৩ ফুট তীব্র ও ৭ ফুট নরমাল ব্যাবহার করলেও ব্যার্থ হয়।
ক। মাহফুজ টার্গেটে পৌছাতে পারেনি
খ। হামিদ পিএল সঙ্গে যোগাযোগ হারায়
গ। আর্টিলারি শত্রু পোস্টের কোনটি নিষ্ক্রিয় করতে পারেনাই
ঘ। সিবি অবিলম্বে শুরু
ঙ। সৈন্যরা প্রচলিত আক্রমণের জন্য প্রশিক্ষিত ছিলনা। তারা জানত না কোন আক্রমণের জন্য কীভাবে জবাব দিতে হবে।
চ। খুব দ্রুত সৈন্যরা রিইনফোর্সমেন্ট সেরেছিল। আমাদের ১ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়।
অক্টোবর ১, ১৯৭১
নতুন ধরণের অপারেশনের সিদ্ধান্ত হয়। কর্নেল জিয়া, মেজর জিয়াউদ্দিন এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। বিলোনিয়া এর রেকি (পরিদর্শনকরণ) করার জন্য আগামীকাল চলে যাব। সুভাপুর-ফেনী মধ্যে চলাচল থামানো হয়। আর্টিলারি শক্তিশালী বাঙ্কারের বিরুদ্ধে অকার্যকর। এগুলো সৈন্যদের না দিয়ে রেখে দেয়া উতিচ।
১৬ অক্টোবর, ৭১
১। রবিউল হক , পিতা – আব্দুল জব্বার (মরহুম), গ্রাম ফাজিল্পুর, থানা ফেনী। একটি অল্প বয়স্ক ছেলে, ১০ বছর মাত্র। আমার সাথে আলাপ করার জন্য ১৩০০ তা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। কথা হল তার সাথে। সে আমাদের জন্য কাজ করছে। শান্ত চেহারা, ছল ছল করা চোখ , সে খুব ভালো মুক্তিযোদ্ধা।
২। মোতাহের হোসেন বয়স – ১২ বছর , পিতা – সিদ্দিক আহমেদ
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রীনগর পরিদর্শন করে লাঞ্চ করে হরিনা ক্যাম্পে আসেন ।
এমপিএ মোশাররফ এবং তার পার্টি চট্টগ্রামের জ্বালানি ডাম্প ধ্বংস করতে আজ রওনা দেন।
৫ সেপ্টেম্বর ৭১
আওয়ামী লীগের শেখ মনির স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কারণে কর্নেল খালেদ গুরুতর হয়রানির শিকার হচ্ছেন । খালেদের ও কঠিন যুক্তি আছে। এটি গেস্টাপো জার্মান এর একটি প্রোটোটাইপ এবং শক্তি লাভ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
আমি আলাদাভাবে আজ মনি ও গতকাল (খালেদ)উভয় এর সাথে কথা বলি। কেউ কোন আপোষ করতে রাজি না।
ভালো হয় মনি যদি এখন কিছু সময়ের জন্য খালেদের এলাকায় অপারেশন না করে। কোনাবান গ্রামে খালেদ একটি ভুল অপারেশন করে। পাকিস্তান প্রচন্ডভাবে গ্রামে শেলিং করে। অনেক বেসামরিক লোক মারা যান। কেন যে খালেদ গ্রামবাসীদের আগে থেকে বের করে নিল না ?
২৭ অক্টোবর ৭১
মনুঘাট (আন্দারমানিকের কাছাকাছি) অপারেশনের জন্য ভিতরে যাচ্ছে এমন এক কোম্পানির ছেলেদের সাথে কথা বললাম। তারা সবাই খুব উদ্বেলিত। এই কোম্পানি মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম এলাকার মধ্যে কাজ করার জন্য যাচ্ছে। লেফটেন্যান্ট রাকিব অফিসার-ইন-চার্জ. ডঃ মান্নান এমপিএ এবং অন্যদের কয়েকজন দলের সঙ্গে যাচ্ছে। একজন বুড়ো লোক যার সাথে আমি হাত মেলানর সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন – “স্যার-তারা সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সবকিছু ধবংস করেছে, কিছুই বাকি নেই”। আমি বললাম “যান , তাদের ধ্বংস করেন। আর কান্নাকাটি করবেন না”।
“হ্যাঁ স্যার”, জবাব দিলেন। আমি তার চোখে প্রতিশোধের আগুন দেখলাম। আমি এখন মুক্তির আলো দেখতে পাচ্ছি।
৪ নভেম্বর ৭১
সকালে বিলোনিয়া জন্য বেড় হই। ব্রিগেডিয়ার সান্ধুর সাথে পথিমধ্যে দেখা হয় । ১৫০০ টায় পৌঁছে যাই এসএস (উপ সেক্টর) আলফাতে। মাহফুজ ও অধিনায়ক শামস উপস্থিত ছিলেন। ১৮০০ টায় কমান্ড হেডকোয়ার্টারে যায় ও বেলনিয়া ১।বি পৌঁছই । ২১০০ টায় আগামীকালের অপারেশন নিয়ে আলোচনা করি। যাবার পর মেজর প্রধান অবগত করেন যে অধিনায়ক শামস ২০৩০ টার সময়ে আত্মহত্যা করেছেন মেজর প্রধানের সঙ্গে অবিলম্বে এসএস আলফা গিয়েছিলাম। আশোকের সঙ্গে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হয়। ঘটনা টি টেলিফোনে ব্রিগেডিয়ার সাবেগ কে অবগত করি। এবং তাকে অনুরোধ করি চ অফ আই (কোর্ট অফ ইনকয়ারি ) করার জন্য – এমন একটি অপারেশনের আগ মুহূর্তে।
৫ নভেম্বর, ৭১
রাজনগরে ব্রিগেড ৮৩ এর কমান্ডারের সাথে কো-অর্ডিনেশন করি। আকাশে মেঘলা ছিল। রাতে সেনারা রওনা করলে বৃষ্টি প্রচন্ডভাবে শুরু হল। আমি ও ২ রাজপুতের কর্নেল দেব সমগ্র সেনাদল নিয়ন্ত্রিত করি। অপারেশন “ব্লকেড” দুই ঘণ্টা বিলম্ব হল। এটা একটা বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা। সবাই স্পম্পূর্ন ভেজা। উত্তর গুথুমার একটি বাড়িতে হেডকোয়ার্টার প্রতিষ্ঠিত করি।
১৯ নভেম্বর ৭১
টি ফোর্স নিয়ে শান্তি বাজার হেড কোয়ার্টার যাই। কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আনন্দ সরূপ এর সাথে প্রশাসন এবং প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করি। বিকেলে বিলোনিয়া ফিরে আসি। শেষ পর্যন্ত আর্মি পন্টন নির্মান করেছে।
বিলোনিয়া ১/বি তে অবস্থা করছি। রাতে ক্যাপ্টেন দেবের সাথে মুক্ত এলাকায় গিয়েছিলাম।
খুব আনন্দ হল। মাটি আকাশের মত নীরব। শুধু নীরব তারা, ধান ক্ষেত – নীরব নদীর দেখা যাচ্ছিল। কেউ কথা বলছিল না। হে আমার প্রিয় জন্মভূমি। তুমি কত ভীত সন্ত্রস্ত ! তোমাকে আমি কতই না ভালোবাসি !
২৬ নভেম্বর ৭১
চাঁদ গাজি, মৃধাবাজার এলাকা মুক্ত হয়। শত্রুরা একটি ভাল যুদ্ধ করে। চাঁদ গাজি দেখে আসলাম। ১৮১ কো – ৯ কমান্ডার ও ১৪ কুমায়ুন ব্যাটালিয়ন এবং মাহফুজ সবার সাথে দেখা হল। ছাগল নাইয়াতে চাল সৃষ্টি করা হচ্ছে এখন।
প্রাপ্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় শত্রু রা ফেনী থেকে সরে যাচ্ছে। শুধুমাত্র বিলম্বিত অবস্থানে আছে। কিছু শত্রু সৈন্য ঢাকা থেকে এয়ারলিফটেড হচ্ছে – খবর পাই।
ক্যাপ্টেন এর নির্যাতন , চাঁদাবাজি সম্পর্কে অসংখ্য রিপোর্ট পাই। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও জনাব খাজা আহমেদ এর সাথে দেখা হয় এই ব্যাপারে। কিছু স্থানে রাজাকারদের গ্রামবাসীরা নির্যাতন করেছে।
সরকার এখনো প্রশাসন ও জাতিগঠনমূলক নীতি ঘোষণা করেননি। এটা ঠিক যে নতুন জাতি শুরু থেকেই একটি সুপরিকল্পিত জাতীয় জীবন শুরু করা আবশ্যক। ব্রিগেডিয়ার শাবেগ এর সাথে কথা হল।
২৯ নভেম্বর ৭১
ফুলগাজি গিয়েছিলাম। আজ ১৩৩০ টায় জেনারেল অরোরা, জেনারেল সরকার ও অন্যান্য সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তারা আসেন। জনাব খাজা ও জনাব নুরুল ইসলাম জেনারেল অরোরা কে স্বাগত জানান। সেনাবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল সরকার জেনারেল হীরা ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফুলগাজী গুদাম এলাকায় একসাথে লাঞ্চ করেন। বিমুক্ত এলাকায় জোনাল কাউন্সিলের সদস্য দের সাথে দেখা হয়। জনাব পানি মজুমদারের সাথে বিলোনিয়া আছি।
সীমান্তে পাক এবং ভারতীয় সেনাদের বিলত আপ সম্পূর্ন হয়েছে। উভয় পক্ষই অপেক্ষা করছে। উভয় দলই হামলা এবং গোলাবর্ষনের জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করে। এটা মনে হয় ১ সপ্তাহ আগের ঘটনা। পাকিস্তান স্পষ্টতই আকাশ পথে আক্রমণের চেষ্টা করবে।
৩ ডিসেম্বর ৭১
১৬৩০ এ মিসেস গান্ধী কলকাতায় ভাষণ দেন। বেশ বদ্ধপরিকর ভদ্রমহিলা। হঠাত অল ইন্ডিয়া রেডিও ঘোষণা করে ১৭৩০ টায় পাক বিমান বাহিনী ৭ ভারতীয় বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে। আবার রাত ৩/৪ ডিসেম্বর রাতে মিসেস গান্ধি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এদিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা জারি করেন।
৪ ডিসেম্বর ৭১
০০৩০ এর পরিবর্তে (৩/৪ তারিখ রাতে) ১২ টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্যেশে অনুতক্ত ও নরম কণ্ঠে ভাষণ দেন। তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করিনি কিন্তু এক উর্দ্ধমুখি পাকিস্তান কে জবাব দেবার আহবান জানান। পূর্ব পশ্চিম উভয় ফ্রন্টেই এয়ার একশন চলে।
ভারত বাংলাদেশের ভিতরে ও বাইরে সব সমুদ্র রুট ব্লক করে।
সাব্রুম এলাকায় ভারী গোলা বর্ষণ হয়। পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার জন্য দ্রুত যাই। বিএসএফ এর ক্যাপ্টেন মাহেক সিং এর কাছ থেকে বিস্তারিত খবর পাই এবং শক্তিবৃদ্ধি জন্য কমান্ডার ‘কে’ ফোর্স কে আদেশ দেই।
আমেরিকা নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তাব করে। রাশিয়া ভেটো দেয়।
আমেরিকা ও চীন দোষারোপ করে ভারত কে আর রাশিয়া যুদ্ধের জন্য পাকিস্তান কে দায়ী করে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর ৭১ ইন্ডাকশন হেল্ড আপ করা হয়।
সকালে জোরাগঞ্জ থেকে মিরসরাই আসি। প্রধান সদর দপ্তর এখানে প্রতিষ্ঠিত করি।
শত্রু পশ্চাদপসরণ করে। সীতাকুণ্ড এ থিন স্ক্রিন ও কুমিরায় বা ভাটিয়ারী তে প্রধান প্রতিরক্ষা হয়। বিস্ময়কর যে , সুভাপুর থেকে কারেরহাট জরাগঞ্জে সব প্রতিরক্ষা অবস্থানের ছেড়ে চলে গেছে।
এই অবস্থান থেকে ৩ মাস লড়াই করা যেত। আমি অবাক। “কে” ফোর্স খুব ধীর এবং সতর্ক ভাবে চলছিল। অনুমোদন ছাড়া লে রকিব শত্রু দের দিকে একটি কোম্পানি মোতায়েন করেন ।
শত্রুরা জাহাজে বিদেশী জাহাজের নকশা অঙ্কন করা চেষ্টা করে বিভ্রান্ত করে পালানোর চেষ্টা করছিল। এসব তথ্য “কে” ফোর্সের কানে আসে। সন্ধ্যায় কমান্ডারের সাথে কনফারেন্সে হয়। মোশাররফ, মঞ্জু ও অন্যদের সঙ্গে মিরসরাই থাকি।
১৬ ডিসেম্বর ৭১
একজন ভাল কমান্ডারের সঠিক সিদ্ধান্ত
কুমিরা হাসপাতালে ভিজিট করি। পশ্চিমে মাত্র এক মাইল দূরে শান্ত সমুদ্র। দক্ষিণে আর্টিলারি গোলাবর্ষণ অব্যাহত। গতরাতে শত্রু ৩২ মোহর অবস্থানে আক্রমণ করে।
০৯০০ টা পর্যন্ত জেনারেল নিয়াজি কে সময় দেয়া হয়েছে। টানটান উত্তেজনা শুরু হল যখন খবরে দেখলাম যে নিয়াজী ৬ ঘণ্টা বাড়িয়ে ১১৩০ টার বদলে ১৫০০ টা পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন। জেনারেল জেকব ঢাকা আসেন আত্মসমর্পণের শর্ত নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সন্ধ্যায় ঘোষণা করা হয় যে নিয়াজি নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেছে।
মিসেস গান্ধী সব ফ্রন্টে ১৭২০০০ ঘন্টায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। জনাব হান্নান, মোশাররফ, মনসুর আমার সাথে সব। চট্টগ্রামের আনোয়ারা জুট মিলে অবস্থান করি।
১৭ ডিসেম্বর ৭১
চট্টগ্রাম শত্রু আজ আত্ম সমর্পণ করে। সকালে ভাটিয়ারীর কাছাকাছি একটি ভাঙা সেতু পর্যন্ত আসে। সেখান থেকে পিটিসি হেঁটে যাই। আমার সাথে জনাব হান্নান ছিল। একটা গাড়ী নেই। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নামি।
এটা একটা মহা আনন্দের দিন। চট্টগ্রাম শহর অবশেষে মুক্ত। বাংলাদেশ এর পতাকা সার্কিট হাউজের ছাদের ওপর উড়ছে। শত শত এবং হাজার হাজার মানুষ আনন্দে একে অপরকে আলিঙ্গন করছে ও নাচা নাচি করছে।
সার্কিট হাউজে আমার পুরানো বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে দেখা হয়। সমস্ত নারী, পুরুষ সাবিকে দেখে কত ভালো লাগছিল। সবার মুখে হাসি। অনেক মাস পড়ে মানুষ নির্ভয়ে রাস্তায় বেরিয়েছে। রাতে সার্কিট হাউজে অবস্থান করি।