যুদ্ধ না অপমান

শিরোনাম সূত্রতারিখ
৪০। যুদ্ধ না অপমানটাইম১০ মে ১৯৭১

 

Razibul Bari Palash

<১৪, ৪০, ৮৯-৯০>

টাইম ম্যাগাজিন; মে ১০, ১৯৭১

যুদ্ধ না অপমান

 

 

পূর্ব পাকিস্তানে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ ও খাদ্যাভাব থাকলেও অন্য অংশে আছে আরেক সমস্যা। সেনা সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সরকার পূর্ব পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সম্পূর্ন বিরোধী। কিন্তু তা করতে গিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পদ ক্ষয় এবং অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। এটা শাসকদের গলার মধ্যে আটকে আছে – একথা এক আমেরিকান কূটনীতিক ইসলামাবাদে বলেন। তিনি আরও বলেন  তাদের হয় এটা গিলে ফেলতে হবে না হয় উগড়ে ফেলতে হবে।

 

গত সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানে সম্মুখ যুদ্ধ থেমে গেছে। তা সত্ত্বেও, পশ্চিম পাকিস্তান সুদুর ভবিষ্যতে পূর্ব পাকিস্তানে প্রচুর সেনা সমাবেশ চালিয়ে যেতে হবে।  তাছাড়া, ভারতের জন্য তার প্রতিরক্ষাকে দুই অতিরিক্ত ভাগে ভাগ করতে হচ্ছে।

 

পুরনো ঘৃণা

 

এদিকে, পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প মাত্র এক তৃতীয়াংশ হয়ে গেছে। কারণ জনবহুল পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক মন্দা । পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পতন দ্বারা প্রভাবিত। স্বাভাবিক সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের পাট শিল্প থেকে পুরো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অর্ধেক আয় হয়। এখন এটা অলস পড়ে আছে। তাছাড়া অন্যান্য শিল্প পরিবহন সুবিধা প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের সাহায্য দরকার পূর্ব পাকিস্তানকে আবার গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু তা কঠিন হবে।  “আমরা অর্থনৈতিক ধ্বংসের কিনারে’ পশ্চিম পাকিস্তানের নিউ  টাইমসের  একটি সম্পাদকীয় গত সপ্তাহে এমনটাই লিখেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিঃশেষ হয়ে গেছে কিছুদিন আগে। এবং মে এবং জুন মাসে ইউ এস ও ইউরোপিয়ান ক্রেডিটরদের ঋণের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে অসমর্থ হয়েছে।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহ বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এবং এগারো জাতি যারা পাকিস্তান অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে সমর্থনকারী  তারাও ইয়াহিয়ার বর্তমান সঙ্কট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগ্রহ দেখাচ্ছেনা।

 

এসব চাপের কারণে ও পূর্ব পাকিস্তানের দুরবস্থার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের ভারতের উপর পুরনো আবার উদ্দীপ্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার পুর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনির নৃশংস আক্রমনের (দমনমূলক অভিযানের) উপর আসা বিদেশি সংবাদমাধ্যমের খবরাখবর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানীদেরকে সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। পশ্চিম পাকিস্তান এটিকে ভারতীয় চক্রান্ত বলে চালানোর চেষ্টা করছেন। ভারত আপাতত নিরপেক্ষ আছে – কিন্তু এতে বাঙ্গালী বিদ্রোহীদের অনেক সুবিধা হয়েছে।

 

 

 

বর্ডার শুটিং

 

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক হুমকি ধারাবাহিকভাবে চলছে। কলকাতায় পাকিস্তানের প্রধান কূটনীতিক বাংলাদেশের দিকে ডিফেক্টেড হবার কারণে ইসলামাবাদ

 

একজন প্রতিনিধি পাঠায় যিনি কোন ভাবেই সুযোগ কড়তে পাড়েন নাই। ফলে পাকিস্তান, অফিস বন্ধ করে দাবি করেন যে ভারত ঢাকায় তার মিশন বন্ধ করেছে।

 

এটা কূটনৈতিক ধস্তাধস্তি আরো বিপজ্জনক।  তবে, পরিস্থিতি ইস্ট ‘পাকিস্তান ও ভারতের সীমান্ত বরাবর উন্নয়নশীল ছিল।  পশ্চিম পাকিস্তানে সেনা বিদ্রোহীদের এবং ভারতের  সরবরাহের সম্ভাব্য উৎস খুঁজে পেতে চেষ্টা করেছেন এবং বাঁধা দেবার চেষ্টা করছেন। গত সপ্তাহে উভয় পক্ষের অভিযোগ যে তাদের উপর সৈন্যরা আক্রমণ করেছে। এই পরিস্থিতি বিদেশী কূটনীতিকদের শঙ্কায় ফেলেছে। তারা ভাবছেন যে আরেকটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের শুরু হতে পারে। কোন দেশই যুদ্ধ করতে চায় না, এবং কারো সেই সামর্থ্য ও নাই। কিন্তু এটা ১৯৬৫ সালের ১৭ দিনের যুদ্ধের মতই পরিবেশ। “সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্তের জন্য তাদের ভারত অথবা পূর্ব পাকিস্তানে নাকাল হবার সম্ভবনা আছে” এক কূটনীতিক একথা বলেন। পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা একটি ধারাবাহিক যুদ্ধবিগ্রহের পথ উন্মুক্ত করে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top