ইয়াহিয়ার সাধারন ক্ষমা ঘোষণার স্বরূপ উদঘাটন করে প্রকাশিত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি বিশেষ ইস্তেহার

বাংলাদেশ বাহিনী শিরোনামসূত্রতারিখ
৫। ইয়াহিয়ার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সরূপ উদঘাটন করে প্রকাশিত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি বিশেষ ইস্তেহারবাংলাদেশ আর্কাইভস, মুজিবনগর——–১৯৭১

 

ট্রান্সলেটেড বাইঃ Razibul Bari Palash

<১১, ৫, ১৭৬-১৭৭>

 

 

পাকিস্তানের ‘প্রেসিডেন্ট জেনারেল! ইয়াহিয়া খান শুধুমাত্র বিশ্বেসেরা খুনী হিসেবে নয় একজন অতুলনীয় মিথ্যুক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় থাকবেন। জেনারেল ইয়াহিয়া সরকারী কর্মচারিদের সাধারণ ক্ষমার যে ডাক দিয়েছেন সেটা নির্জলা মিথ্যা ছাড়া কিছু নয়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর জন্য বিশ্বনেতৃত্বকে ভুল বোঝানোই ছিল এর উদ্যেশ্য। মূলত এটি একটি ধাপ্পাবাজি মাত্র। পাকিস্তান রেডিও ও অন্যান্য তথ্য গণমাধ্যম প্রচার করে যে ইবিআর এবং ইপিআর এর ২০০০ সৈন্য এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাক প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পন করেছে। তারা দাবি করে অনুপস্থিতির সময়ের বকেয়া বেতন ও তাদের দেওয়া হয়েছে এবং তাদের নিজ নিজ পেশায় পুনর্বাসিত করা হয়েছে। কিন্তু আসল কথা হল এসব কিছুই করা হয়নি।  প্রস্তাব এবং আত্মসমর্পণের বিষয়টি ও সম্পূর্ণ মিথ্যা অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু তাই নয়, আগে গ্রেফতারকৃতদের অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে যে কথা বলা হয়েছে সেটা ছিল মিথ্যা। একজন বাঙালি Fit লেফটেন্যান্ট যিনি সম্প্রতি ঢাকা ক্যন্টনমেন্ট পাকবাহিনীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি অনেকের নাম বলেন যারা সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাবের পরেও সেখানে বন্দী অবস্থায় পড়ে আছে। গত দুই মাস ধরে যেসব বন্দীদের অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে যাদের নাম তিনি মনে করতে পেরেছিলেন সেগুলো নিম্নে বর্নিত হল-

 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইয়াসিন (আর্মি সার্ভিস কোর)

লেফটেন্যান্ট কর্নেল জলিল (ই বেঙ্গল)

মেজর কামাল (মেডিকেল কোরে)

মেজর কাজী আশরাফ (আর্মি সার্ভিস কোর)

মেজর আলতাফ (ইন্টেলিজেন্স)

মেজর আওলাদ হোসাইন (ইপিআর)

ক্যাপ্টেন আজিজ (ই বেঙ্গল সেন্টার) ক্যা

প্টেন সুজা (সেনাবাহিনী পুলিশ)

ক্যাপ্টেন আলম (আর্মি প্রকৌশলী)

ক্যাপ্টেন হুদা (আর্টিলারি)

লেফটেন্যান্ট শমসের মবিন চৌধুরী (ই বেঙ্গল)

সেকেন্ড লে জিয়াউদ্দিন (আর্টিলারি)

উইং কমান্ডার এ রহমান (পাফ)

স্কোয়াড্রন লিডার মঞ্জুর (পি এ এফ)

স্কোয়াড্রন লিডার মহিবুর রহমান (পি এফ)

স্কোয়াড্রন লিডার বদিউর রহমান (পি এফ)

স্কোয়াড্রন লিডার শামসুর রহমান (পি এফ)

Fit লেফটেন্যান্ট খলিলুর রহমান (পি এ এফ)

ফিট লেফটেন্যান্ট মির্জা (পি এ এফ)

ফ্লাইং অফিসার ফজলুর রহমান (পি এ এফ)

জনাব মহিউদ্দিন, এমপিএ

জনাব লোকমান হোসেন (পরিচালক, টেলিযোগাযোগ)

জনাব আব্দুল্লাহ (উপ-পরিচালক, জিওলজিক্যাল সার্ভে)

জনাব মোজাম্মেল হক

এসডিও, রাজবাড়ী

এসডিও, মাদারীপুর

জনাব নুরুল মোমেন এসপি ফরিদপুর

মেজর মান্নান (বেলুচ রেজিমেন্ট)

যশোরে ক্যাপ্টেন নুরুজ্জামান (আর্মি শিক্ষা কর্পস) আটক রয়েছেন।  

 

এছাড়া আরও অনেক কর্মকর্তা অন্যান্য সেনানিবাসগুলোতে বন্দী আছেন। লেফটেন্যান্ট শমসের মবিন চৌধুরী ছাড়া বাকি অফিসারদের কেউ স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ ছিল না। এঁদের মধ্যে কয়েকজন, যারা ছুটিতে ছিলেন, টিক্কা খানের ক্ষমার খোলসের আড়ালে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হয়। অনেককে গ্রেফতারের একমাত্র কারণ ছিল যে তারা বাঙালি। লেফটেন্যান্ট শমসের মবিন চৌধুরীকে যখন চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার করা হয় তখন তিনি প্রাণপনে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছিলেন এবং আহত হয়ে পড়েন। তাকে রেডিওতে জোর করে সেনাবাহিনী সম্পর্কে ভালো বলতে বলা হয়েছিল যাতে অনেকে সেখানে যোগ দেয়। এখনো তাঁর উপর অমানবিক নির্যাতন চলছে। অত্যধিক প্রহারের কারণে তিনি প্রায় খোঁড়া হয়ে গেছেন। এভাবে দিন রাত সকল গ্রেফতার কৃত অফিসার ও অন্যান্য পদবীর শত শত বাঙ্গালী কর্মকর্তাদের পাকবাহিনী অমানবিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এদের কাছ থেকে জোর করে জবানবন্দি নেয়া হয় যে শেখ মুজিবের যুদ্ধের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা ভুল করেছে-পাকিস্তানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

 

ইয়াহিয়া খান ও তার সামরিক জান্তারা খুব ভালো করেই জানত যে সমস্ত বিশ্ব জানতে পারবে তারা একদল খুনি ছাড়া কিছুই নয় যারা জোর করে তাদের গনহত্যাকে ঢাকার চেষ্টা করছে। সাধারণ ক্ষমা থাক বা না থাক বাঙলার মাটিতে ইয়াহিয়া খানের সৈন্যদের কবর রচনা চলমান থাকবে।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ আর্কাইভস, মুজিবনগর,

৫ নাম্বার দলিল, পেজঃ ১৭৬-১৭৭,

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ একাদশ খণ্ড

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top